সুবিনয়,
ভীষণ অস্থিরতা চলছে ভেতরে বাহিরে। কোথাও স্থির হতে পারছি না। দ্বন্দ্ব চলছে। কেউই সময়টাকে ধরতে পারছে না বা চাইছে না। কথা বলা যায় না। কথা বললে নাকি ভয় আছে।
ভেবেছি ঢাকার জীবনটাকে অন্যভাবে সাজাবো। কিচ্ছু ভাববো না। মানুষকে নিয়েও না। কিন্তু অস্থিরতা দিনদিন বেড়েই চলছে। এতো বিচিত্র এই শহর। যান্ত্রিক বলে শহরটার দুঃখগুলো আড়াল করা হচ্ছে।
গভীর রাতে ফুটপাতে বের হয়েছি। এখন শীতকাল, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, শিরশিরে হাওয়া। জুতো জ্যাকেট পরেও ঠাণ্ডা লাগছে। মানুষ রাস্তায় ঘুমাচ্ছে। কেউ পাতলা ফিনফিনে কাপড় মুড়িয়ে,কেউ কাঁপতে কাঁপতে ওলোট পালট করছে। কটা ছোট্ট শিশু যাদের খেলার বয়স এখনো উৎরায়নি, ওরা রাত জেগে আছে। ক্ষুধা ওদের চোখ মুখ ফেটে বেরিয়ে আসছে। শো শো করে দুএকটা প্রাইভেট কার এদিক ওদিক আসছে-যাচ্ছে।
রাতে শহরে নিস্তব্ধতা নামে। করুণ এক নিস্তব্ধতা। এই শহরের এদিকে ওদিকে আবাসিক এলাকা হচ্ছে। দিনদিন গাড়ি বাড়ছে। শপিংমল বাড়ছে। রিক্সাঅলারা বাড়ি ফেরে না। ওদের বাড়ি নেই। রিক্সাতেই ঝিমোচ্ছে। শহরটা বড় অদ্ভূত। দৃশ্যের পর দৃশ্য। সম্পূর্ণ আলাদা। সবাই শুধু বাহিরের দৃশ্যটা দেখে, ভেতরেরটা?
এদিকে বিজয়ের ৪৯তম আয়োজন। বারগুলোতে আলো ঝিকমিক করছে। কৃষকদের অবস্থা জানি না। পত্রিকায় যেটুকু পড়ি তাতে মনে হয়। খুব একটা সুখে নেই। দাঁড়ানোর মতো শক্তি কৃষকরা দিনদিন হারায়ে ফেলছে।
গত সপ্তাহে গাজীপুরে গিয়েছিলাম। পোশাক শ্রমিকরা স্যাতসেতে রুমে গদাগদি করে ঘুমায়। ছঘণ্টাও ঘুমাতে পারে না। রাত বারোটায় ফিরে সকাল সাতটায় আবার কাজে যোগ দেয়। বেতন কেমন পায়, সবারই জানা। ডাল ভাত খেয়ে দুএকহাজার বাড়িতে পাঠাতে পারে। ছিনতাই বেড়ে গেছে। প্রতারণা বেড়ে গেছে। পুলিশ কোনটার সমাধান ঠিকমতো করতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরো করুণ, মর্মান্তিক। আমি জানি না, এর উত্তরণ আদৌ সম্ভব কিনা! বা কতদিন? রাজনীতিতে নতুন সমিকরণ চলছে। মানুষের পক্ষে কথা বলা মানুষ কমে আসছে। যে দুএকজন বলতো, তারাও বিভিন্ন সুবিধে চুক্তিতে আয়েশ করছে। সবাই ক্ষমতা আর টাকাকে বোঝে। মানুষ বোঝে না।
চারদিকে সাফল্যের ব্যানারে ছেঁয়ে গেছে শহর। এইসব দেখে কত হাসাহাসি করেছি, খিস্তি করেছি। এখন আর করতে পারি না। একা একা হাসলে পাগল ভাবে। তুইও নেই। কবে ফিরবি? বহুদিন হাসি না। হেম আমার পাশেই সুনীলি জীবন বেছে নিয়েছে। বর্ণ এক ধওলা ইঁদুরের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সময়টা ভালো যাচ্ছে না। শুধু অস্থিরতা। সুবিনয়, কবে আসবি?