সাদি মহম্মদ
অসংখ্য ভক্ত, শ্রোতা, স্বজন, শিক্ষার্থীদের কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ।

বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যার পর নিজ ঘরে স্বেচ্ছামৃত্যুর মাধ্যমে পরিসমাপ্তি টানেন ঘটনাবহুল জীবনের। সুরের সঙ্গে তার বসবাস, তাই মৃত্যুর আগেও ডুবে ছিলেন সুরে। জীবনের সমাপ্তি টানার আগেও বাজিয়ে গেছেন নিজের প্রিয় তানপুরা।

যার হাত ধরে হাজার হাজার রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীর সৃষ্টি সেই সঙ্গীতগুরুর হঠাৎ চলে যাওয়া শোকের ছায়া নামিয়েছে পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।

সাদি মহম্মদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। আওয়ামী লীগ নেতা সলিমুল্লাহ ও জেবুন্নেছা দম্পতির ১০ ছেলেমেয়ের মধ্যে সেজ সন্তান সাদি মহম্মদ।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের বাড়িতে ছেলে সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি।

গুলি করে হত্যা করা হয় সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহকে। পরে তার বাবার নামেই মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।

সেদিন বাবা ছাড়াও চোখের সামনে বেশ কয়েকজন স্বজনের মৃত্যু দেখেছেন সাদি মহাম্মদ। তবে সেই ভয়াবহ বেদনা বুকে চেপেই করে গেছেন সঙ্গীত সাধনা। রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে খুঁজেছেন জীবনের সঞ্জিবনী।

ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন সাদি। ১৯৭৩ সালে ভর্তি হন বুয়েটে। কিন্তু মন যে তার রবীন্দ্রসঙ্গীতে।

তাই ১৯৭৫ সালে গানের টানে বুয়েট ছেড়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে চলে যান সাদি মহম্মদ। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। গানের জগতে সেই যে পথচলা শুরু, তারপর আর থামেননি।

নিজেকে তৈরি করেছেন গানের জগতের একজন মহাতারকা হিসেবে। নিজ হাতে দীক্ষা দিয়ে তৈরি করেছেন অসংখ্য গুণী শিল্পী।

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও আধুনিক গানও গেয়েছেন সাদি মহম্মদ। দায়িত্ব পালন করেছেন সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে।

গত বছর মা এবং বড় বোনের মৃত্যুর পর সাদি মহম্মদ মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ। সঙ্গে ছিল একাত্তরের ভয়াবহ স্মৃতি ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে যথার্থ সম্মান না পাওয়ার আক্ষেপও!

গানের পাশপাশি অবসরে বই পড়তে ভালোবাসতেন সাদি মহম্মদ। করেছেন গানের সুরও। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সাদি মহম্মদ। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে গেয়েছেন আধুনিক গানও।

২০১৫ সালে সাদি মহম্মদ বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার। পেয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি পদকও। তবে সবচেয়ে বেশি যেটি পেয়েছেন, সেটি হলো; কোটি মানুষের ভালোবাসা।

দর্শক, সাদি মহম্মদের মতো গুণী শিল্পীর অকলপ্রয়াণ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা কোনো শিল্পী জীবনের এমন অবসান চাই না। শিল্পীরা দীর্ঘজীবী সেই হোক সেই প্রত্যাশা আমাদের।

সেই সঙ্গে আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করার। আমাদের চ্যানেলটি একেবারেই নতুন, তাই আপনাদের সাবস্ক্রাইব আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাবস্ক্রাইব করে আমাদের উৎসাহিত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *