বাংলাদেশের অভিনয় জগতে যে কয়েকজন তারকা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যন্য উচ্চতায়, নিঃসন্দেহে জয়া আহসান তাদের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে। জয়া আহসান শুধু তার প্রজন্মেরই নন; বাংলাদেশের যেকোনো সময়ের সবচেয়ে গুণী অভিনয় শিল্পীদের একজন।
বাংলাদেশে ও ভারতে এই ভার্সেটাইল অভিনেত্রী একের পর উপহার দিয়ে চলেছেন দুর্দান্ত সব সিনেমা। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ইরানি প্রযোজনার একটি সিনেমা।
সিনেমার বাইরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্যও প্রশংসিত এই সব্যসাচী শিল্পী। বিশেষ করে পশু-পাখির প্রতি মমতাবোধের কারণে আলাদা পরিচিত রয়েছে তার।
তবে অন্যান্য বিষয়ে জয়া আহসান যতটা সোজা সাপ্টা কথা বলেন, নিজের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে ততটাই বেশি গোপনীয়তা রাখতে পছন্দ করেন।
এই যেমন ধরা যাক তার বৈবাহিক জীবনের কথা। ১৯৯৮ সালে তখনকার আরেক জনপ্রিয় মডেল ফয়সাল আহসানকে বিয়ে করেন জয়া। এরপর বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা জয়া মাসউদ নাম বদলে হয়ে যান জয়া আহসান। তবে ১৩ বছরের মাথায় ২০১১ সালে ফয়সালের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। যদিও তারপরও নিজের নাম থেকে ফয়সালের নামের আহসান অংশটি কখনো ছেটে ফেলেননি জয়া।
গত ১৩ বছরে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কখনো প্রকাশ্যে কোনো কথাও বলেননি জয়া। বরং নিজের ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তিগতই রাখতে চেয়েছেন তিনি।
তবে তারকাদের জীবন নিয়ে তো ভক্তদের জানার আগ্রহ বরাবরই বেশি। আর তাই বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন শুনতে হয় জয়া আহসানকে। অসংখ্যবার প্রশ্নের পর অবশেষে ১৩ বছর পর বিষয়টি কথা বললেন জয়া আহসান। যদিও সেখানেও বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে কিছু বলেননি, শুধু বলেছেন বিবাহবিচ্ছেদের পর কীভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছেন।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ফিল্মফেয়ারের সঙ্গে ক্যারিয়ারের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন জয়া। সেখানে জয়াকে বিবাহবিচ্ছেদ এবং কাজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “উত্থান-পতন প্রত্যেক মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা যুদ্ধের মতো। সেই সময়ে আমার মানসিক ধারণাটাই পরিবর্তন হয়ে গেল। আমি পুরোপুরিভাবে কাজের দিকে দৃষ্টি ঘোরাই। সাধারণত সেই সময়ে মেয়েরা অনেক কিছু থেকেই বিচ্যুত হয়ে পড়ে। এমনকি ফোকাস থেকেও সরে যায়। কিন্তু আমার কাজ আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে। যে কারণে আমি কাজকেই ভালোবেসেছি। আমি কখনোই কাজ থেকে দূরে সরিনি। আমি আমার এই যাত্রাকে ভালোবাসি। এর মধ্য দিয়েই মানুষ আমার প্রশংসা করেন, আমি কাজকেই সম্মান করি।”
আরও পড়ুন: ‘গোপনে দেশ ছাড়ার’ সংবাদে শাবনূরের ক্ষোভ
গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা জয়া ছোটবেলা থেকে নাচ, গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকাও শিখেছিলেন। জয়া আহসানের ক্যারিয়ার শুরু হয় ছোট পর্দা দিয়ে। তিনি বহু নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। মডেল হয়েছেন অনেক বিজ্ঞাপনের।
গুণী এই অভিনেত্রীর চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ব্যাচেলর’ সিনেমা দিয়ে। এর ৬ বছর নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘ডুবসাঁতার’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর আর থেমে থাকেননি জয়া আহসান। একের পর এক উপহার দিয়ে চলেছেন দারুণ সব সিনেমা।
২০১৩ সালে অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘আবর্ত’ সিনেমা দিয়ে কলকাতায় অভিনয় শুরু করেন জয়া আহসান। সেখানেও একের পর এক ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়ে চলেছেন জয়া।
নিজের ক্যারিয়ারে ছয়বার বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাশাপাশি ফিল্মফেয়ার, ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ডসহ একাধিক বিদেশি পুরস্কার পেয়েছেনে কিংবদন্তী অভিনয় শিল্পী জয়া আহসান।