মামুনুর রশীদ বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের এক মহাতারকার নাম। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃত। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি মঞ্চ ও টিভির জন্যে অসংখ্য নাটক লিখেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ইস্যূ নিয়ে, শ্রেণী সংগ্রাম, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলন নিয়ে নাটক রচনা ও নাট্য পরিবেশনা বাংলাদেশের নাট্য জগতে মামুনুর রশিদকে একটা আলাদা স্থান করে দিয়েছে। ব্যক্তি থেকে হয়ে উঠেছেন নাট্যজগতের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
আজ এই কিংবদন্তি নাট্যজনের ১৯তম জন্মদিন। বয়সের হিসেবে ৭৬ বছর পূর্ণ করলেন তিনি। ১৯৪৮ সালে লিপ ইয়ারে অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাই প্রতিবছর তার জন্মদিন আসে না। প্রথিতযশা এই নাট্যকারের জন্মদিবসটি আসে চার বছর পর পর। আজকের দিনটি নিয়ে তার জন্মদিন পালনের সুযোগ হচ্ছে ১৯ বারের মত। তাই বলাই যায় ৭৬ বছরের মামুনুর রশীদের ১৯তম জন্মদিন আজ।
মামুনুর রশীদের জন্মদিন উপলক্ষে ‘আলোর আলো” শিরোনামে উৎসবের আয়োজন করেছে আরণ্যক নাট্যদল।
২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে এই উৎসব চলবে। উৎসবে থাকবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটকের মঞ্চায়ন, সংগীত, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী ও থিয়েটার আড্ডা।
মামুনুর রশীদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, টাঙ্গাইলের কালিহাতির পাইকড়া গ্রামে। তবে বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন, পড়েছেন। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি।
অভিনেতা হিসেবে অধিক সফল ও নন্দিত হলেও মামুনুর রশীদের পথচলার শুরুটা লেখালেখির মাধ্যমে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশনের জন্য নাটক লেখা শুরু করেন তিনি। তার লেখায় উঠে আসে গ্রামীণ জীবনের পটভূমি, পরিবার, সামাজিক ইস্যু ও বঞ্চিতদের অধিকারের বিষয়বস্তু।
নাট্যাঙ্গনে যোগ দেওয়ার চার বছরের মাথায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনচেতা, শিল্পমনা মানুষ হয়ে তিনি বসে থাকতে পারেননি। ছুটে গেছেন রণাঙ্গনে; কাজ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে গড়ে তোলেন ‘আরণ্যক’ নাট্যদল। যা বাংলাদেশের নাট্যশিল্পীদের অন্যতম আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত। এখনও এই দল নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি।
মঞ্চে তার সৃষ্ট নাটকের মধ্যে রয়েছে গন্ধর্ব নগরী, ওরা কদম আলী, ইবলিশ, এখানে নোঙর, মানুষ, সংক্রান্তি, রাঢ়াং, কহে ফেসবুক ইত্যাদি। মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি মামুনুর রশীদ টিভি নাটকেও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নাটক লেখা, নির্দেশনা দেওয়া এবং অভিনয় সবই সমান্তরালে চালিয়েছেন। তার সৃষ্ট টিভি ধারাবাহিকের মধ্যে ‘সুন্দরী’, ‘অলসপুর’ বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বহু সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি। এর মধ্যে ‘কিত্তনখোলা’, ‘রূপকথার গল্প’, ‘মনপুরা’, ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, ‘নদীজন’, ‘শঙ্খচিল’, ‘খাঁচা’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘দেশান্তর’, ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ উল্লেখযোগ্য।
‘মনপুরা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ খল চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মামুনুর রশীদ। এছাড়া নাট্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এই কিংবদন্তি। ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভারতের পদ্মশ্রী সম্মাননা পাচ্ছেন বাংলাদেশের রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা