গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ এর ছেলে নিবিড় কুমার ও তার তিন বন্ধু। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। বেঁচে যান নিবিড়।
ওইদিন গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নিবিড়। সড়ক বিভাজকে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যাওয়ার পর গাড়িতে আগুন ধরে যায়। গাড়িতে থাকা শাহরিয়ার খান মাহির ও আরিয়ান দীপ্ত ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান এঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ। নিবিড় বেঁচে গেলেও গত ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালের বিছানায় পাঞ্জা লড়ছেন জীবনের সঙ্গে ।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর গত বছরের ১৪ ফেব্রয়ারি কানাডায় সস্ত্রীক উড়াল দেন কুমার বিশ্বজিৎ। এখনও রয়েছেন সেখানেই। প্রহর গুনছেন সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে জানান ছেলের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ।
কানাডার একটি কলেজে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে পড়াশোনা করতেন নিবিড় কুমার। দুর্ঘটনার পর ১৪ মাস ধরে টরন্টোয় সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। দুর্ঘটনার পরদিন থেকেই তার সঙ্গে বাবা–মা দুজনেরই ঠিকানা ওই হাসপাতাল।
এই দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে গানের বাইরে রয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। গত বছরের নভেম্বরে একবার দেশে এসেছিলেন তিনি। এরপর এ বছরের ১৮ এপ্রিল সপ্তাহ তিনেকের জন্য ঢাকায় এসেছেন তিনি। ঢাকায় বসেই প্রথম আলোকে জানালেন ছেলের অবস্থা।
কুমার বিশ্বজিৎ জানান, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নিবিড়কে এখন চেয়ারে বসানো যাচ্ছে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখছেন বাবা–মাকে।
ছেলের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, “শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। কিন্তু কবে যে পুরোপুরি সুস্থ হবে, তা বলা মুশকিল। এখনো হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। আমি কানাডায় যাওয়ার পর হাসপাতাল থেকে রিহ্যাবে নেওয়া হবে। রিহ্যাবে নেওয়ার পর ফিজিওথেরাপি, স্পিচথেরাপি, স্টিমিউলেটেড থেরাপি। এসব থেরাপি হাসপাতালে ওইভাবে হয় না। নিবিড়ের চিকিৎসা এখন আর হাসপাতালের নয়, তাই কানাডায় ফিরে রিহ্যাবে নেওয়ার সব ধরনের ব্যবস্থা করতে হবে। রিহ্যাবের সময়টাও দীর্ঘ। তাই ওটা শুরুর আগে দেশের কিছু কাজ গুছিয়ে নিতে এলাম।”
জনপ্রিয় এই সঙ্গিতশিল্পী বলেন, “নিবিড়ের মা অনেক কষ্ট করছে। সকালে হাসপাতালে আসা, এরপর রাতে আবার বাসায় যাওয়া—সব মিলিয়ে কঠিন সময় কাটছে। যদিওবা আমাদের আত্মীয়স্বজনও আছেন। তারাও হাসপাতালে বিভিন্ন সময় আসেন, নিবিড়ের দেখাশোনায় সময় দেন।”
ছেলের মুখে বাবা–মা ডাক শোনার তাকিয়ে থাকেন কুমার বিশ্বজিৎ ও তার স্ত্রী নাঈমা সুলতানা। তবে নিবিড়ের কণ্ঠে কবে সে ডাক শোনা যাবে, তা এখই বলা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, “এত মাস তো হাসপাতালের বিছানায় শোয়া ছিল। এখন নিবিড়কে তুলে চেয়ারে বসানো যায়। ঘাড় ঘোরায় সে। হাত-পা ফ্লেক্সিবল হয়েছে আরকি। এত লম্বা সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে হাত–পা সব অসাড় হয়ে গিয়েছিল। মাস দুয়েক ধরে চেয়ারে তুলে বসানো হচ্ছে। সবকিছু আস্তে আস্তে হচ্ছে, খুবই ধীরে ধীরে। খাবার এখনও কৃত্রিম উপায়ে খাওয়ানো হচ্ছে।”
নিবিড় এখন চোখ মেলে তাকান। তাকিয়ে মা–বাবাকে দেখেন বলে জানান কুমার বিশ্বজিৎ। নিবিড় তাদের চিনতে পারছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, “নিবিড়ের এক্সপ্রেশনে দেখে মনে হয়, বাবা-মাকে চিনছে। আমাদের চেনে। অনেক সময় তাকানো, ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘোরা। এরপর যখন বলা হয়, ‘বাবা আসছে, মা আসছে’, তখন বোঝা যায়, আমাদের চেনে। মা যখন বলে, ‘আমাদের চিনতে পারো?’ তখন তার এক্সপ্রেশনে বুঝতে পারি, হয়তো চিনছে। অপেক্ষায় আছি কখন বাবা বলে ডাকবে।”